Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গ্রাম আদালত

৬.২. বিচারিক ও আইনি সেবা
 

ইউনিয়ন পরিষদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব হচ্ছে গ্রাম আদালত কার্যকর ভাবে পরিচালনা করা। গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ আনুসারে, প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত পরিচালিত হবে। গ্রাম আদালত পরিচালনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা নিম্নে দেওয়া হলো।
 

৬.২.১. গ্রাম আদালতের উদ্দেশ্যে
 

১. কম সময়ে, অল্প খরচে স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা;

২. দরিদ্র, অনগ্রসর, নারী, সুবিধা বঞ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও বিচার প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা;

৩. বিবদমান পক্ষসমূহের পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা;

৪. বিরোধ নিষ্পত্তির পর বিরোধীয় পক্ষ সমূহের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ন সহাবস্থান সৃষ্টি;

৫. স্থায়ী ভাবে বিরোধ নিরসন;

৬. উচ্চ আদালতে মামলার চাপ কমানো; এবং

৭. সামাজিক ন্যায্যতা ও সুশাসন সৃষ্টি।
 

গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য মামলা
 

১. ফৌজদারী কার্যবিধি এবং দেওয়ানী কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন গ্রাম আদালত আইনের তফসিলের প্রথম অঙ্কে বর্ণিত বিষয়াবলি সম্পর্কিত ফৌজদারী মামলা এবং দ্বিতীয় অঙ্কে বর্ণিত বিষয়াবলী সম্পর্কিত দেওয়ানী মামলা, ভিন্ন রকম বিধান না থাকলে, গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য হবে এবং কোনো ফৌজদারী বা দেওয়ানী আদালতের অনুরূপ কোনো মামলা বা মোকর্দ্দমার বিচারের এখতিয়ার গ্রাম আদালতে থাকবে না।
 

২. গ্রাম আদালত কর্তৃক তফসিলের প্রথম অঙ্গে বর্ণিত কোন অপরাধের সাথে কোন মামলা বিচার্য হবে না যদি উক্ত মামলায় আমলযোগ্য কোন অপরাধের দায়ে কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে ইতোপূর্বে গ্রাম আদালত কর্তৃক দন্ড প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, যদি-
 

ক) উক্ত মামলায় কোন নাবালকের স্বার্থ জড়িত থাকে;
 

খ) বিবাদের পক্ষগণের মধ্যে সম্পাদিত কোন চুক্তিতে সালিশের বা বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান থাকে;
 

গ) সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কর্তব্য পালনরত কোন সরকারি কর্মচারী উক্ত বিবাদের কোনো পক্ষ হয়।

৩. যে স্থাবর সম্পত্তির দখল অর্পণের জন্য গ্রাম আদালত কর্তৃক আদেশ প্রদান করা হয়েছে. ঐ স্থাবর সম্পত্তিতে স্বত্ব প্রতিষ্টার জন্য বা এর দখল পুনরুদ্ধারের জন্য কোন মোকর্দ্দমা বা কার্যধারার ক্ষেত্রে (১)- এর বিধানবলি প্রযোজ্য হবে না।

৬.২.২ গ্রাম আদালত গঠনের আবেদন
 

(১) যে ক্ষেত্রে এ আইনের অধীন কোন মামলা গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচার যোগ্য হয় সেক্ষেত্রে বিরোধর যে কোন পক্ষ উক্ত মামলা বিচারের নিমিত্ত গ্রা আদালত গফনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহনের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিখিত কারন দর্শিয়ে উক্ত আবেদনটি নাকচ না করলে নির্ধারিত পদ্ধতিতে গ্রাম আদালত গঠনের উদ্যেগ গ্রহণ করবেন।
 

(২) উক্ত আইনের অধীন আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ দ্বারা সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি আদেশের বিরুদ্ধে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এখতিয়ার সম্পন্ন সহকারী জজ আদালতে রিভিশন করতে পারবেন।

 

৬.২.৩ আবেদনের ফিস

তফসিলের প্রথম ভাগের সাথে সম্পর্কিত হলে দুই টাকা এবং দ্বিতীয় ভাগের সাথে সম্পর্কিত হলে আবেদন পত্রের সাথে চার টাকা ফিস জমা দিতে হবে।
 

৬.২.৪ নাকচ আবেদন না-মঞ্জুরের আদেশ সহ আবেদনকারীকে ফেরত প্রদান।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক যেক্ষেত্রে আবেদন নাকচ হয় সেক্ষেত্রে তা উক্ত না মঞ্জুরের আদেশ সমেত আবেদনকারীর নিকট ফেরত দিতে হবে।
 

৬.২.৫ আবেদন নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন/ আপীল

আবেদন না-মঞ্জুর হওয়ার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনঃ বিচারের জন্য তা যথাযথ এখতিয়ার সম্পন্ন সহকারী জজের নিকট দাখিল করতে হবে।
 

৬.২.৬ আবেদনে কী কী তথ্য থাকতে হবে?

আবেদনে নিম্নলিখিত তথ্য ও বিবরণ থাকতে হবে:

১. যে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করা হয়েছে তার নাম ও ঠিকানা;

২. আদেনকারীর নাম, ঠিকানা ও পরিচয় ;

৩. প্রতিবাদীর নাম, ঠিকানা ও পরিচয়;

৪. যে ইউনিয়নে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে অথবা মামলার কারন সৃষ্টি হয়েছে তার নাম;

৫. ঘটনা সৃষ্টির কারন, ঘটনারস্থান, ইউনিয়নের নাম, ঘটনার তারিখ ও সময়;

৬. অভিযোগ বা দাবীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ, প্রকৃতি ও ক্ষতির পরিমাণ;

৭. প্রার্থীত প্রতিকার।
 

৬.২.৭ আবেদনপত্র পাবার পর চেয়ারম্যান কি করবেন?
 

আবেদনটি পাবার পর ইউপি চেয়ারম্যান তা পরীক্ষা করে গ্রহণ করবেন। আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিবাদীকে হাজির হতে সমন দেবেন এবং বাদীকে হাজির হতে নির্দেশ দিবেন। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
 

আবেদনটি অসম্পূর্ন হলে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকলে অথবা এখতিয়ার বহির্ভূত হলে তিনি তা নাকচ করতে পারবেন। তবে কী কারনে আবেদনটি নাকচ করা হলো তা অবশ্যই আবেদনপত্রের উপর লিখতে হবে।
 

৬.২.৮ প্রতিবাদী দাবী বা বিবাদ স্বীকার করলে গ্রাম আদালত গঠন করা হবে না।
 

সময় অনুযায়ী অথবা প্রকারান্তরে প্রতিবাদী হাজির হলে এবং দাবী বা বিবাদ স্বীকার করলে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে উক্ত দাবি পূরণ করলে গ্রাম- আদালত গঠন করা হবে না।
 

৬.২.৯ কী কী কারনে আবেদন নাকচ করা যাবে?

১. আবেদনের ফিস জমা না দিলে;

২. এখতিয়ার বহির্ভূত হলে;

৩. অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আবেদন হলে;

৪. আবেদন অসম্পূর্ন হলে অর্থাৎ আবেদনকারী, প্রতিবাদী, সাক্ষীর নাম, ঠিকানা ও পরিচয় না থাকলে;

৫. ঘটনা, ঘটনা সৃষ্টির কারন, ঘটনার স্থান-সময়-তারিখ, ক্ষতির পরিমাণ, প্রার্থীত প্রতিকার, ইত্যাদি উল্লেখ না থাকলে;

৬. ব্যক্তি আদালত গ্রাহ্য কারনে পূর্বে দোষী সাব্যস্ত হলে’

৭. নাবালকের স্বার্থের পরিপন্থি হলে;

৮. বিরোধটি নিয়ে সালিশির চুক্তি হলে;

৯. সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কর্তব্য পালনরত কোনো সরকারি কর্মকারী যদি দেওয়ানি মামলা কোনো পক্ষ হয়।

৬.২.১০. গ্রাম আদালতের এখতিয়ার

১. যে ইউনিয়নে অপরাধ সংগঠিত হবে বা মামলার কারন উদ্ভব হবে, বিবাদের পক্ষগণ সাধারণত সেই ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে, সে ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হবে এবং অনুরূপ মামলার বিচারের এখতিয়ার গ্রাম আদালতের থাকবে।

২. যে ইউনিয়নে অপরাধ সংঘটিত হবে বা মামলার কারন উদ্ভব হবে, বিবাদের এক পক্ষ সেই ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে এবং অপরপক্ষ ভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে, যে ইউনিয়নের মধ্যে অপরাধ সংঘটিত হবে বা মামলার কারন উদ্ভব হবে, সেই ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হবে; তবে পক্ষগন ইচ্ছা করলে নিজ ইউনিয়ন হতে প্রতিনিধি মনোনীত করতে পারবে।
 

৬.২.১১. গ্রাম আদালতের ক্ষমতা
 

এ আইনে ভিন্নরূপ কোনো বিধান না থাকলে, গ্রাম আদালত আইন ২০০৬-এর তফসিলের প্রথম অংশে বর্ণিত ফৌজদারি অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে কেবলমাত্র অনধিক পঁচিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ প্রদান করতে পারবে। তফসিলের দ্বিতীয় অংশে বর্নিত দেওয়ানি বিষয়াবলির সাথে সম্পর্কিত কোন মামলায় অনুরূপ বিষয়ে তফসিলে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের জণ্য আদেশ প্রদান করতে বা সম্পত্তির প্রকৃত মালিককে সম্পত্তি বা এর দখল প্রত্যর্পণের জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবে।
 

    স্হানীয়ভাবে পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বিচার প্রাপ্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে প্রণীত হয় গ্রাম  আদালত অধ্যাদেশ। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ০৯ মে ১৯ নং আইনের মাধ্যমে প্রণীত হয় গ্রাম আদালত আইন ।এ আইনের মূল কথাই হলো স্হানীয়ভাবে স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পিত্তি।নিজেদেন মনোনীত প্রতিনিধিদের সহায়তায় গ্রাম আদালত গঠন করে বিরোধ শান্তি পূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক শান্তি ও স্হিতিশীলতা বজায় থাকে বলেই এ আদালতের মাধ্যমে আপামর জনগণ উপকৃত হচ্ছেন ।

গ্রামাঞ্চলের কতিপয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেওয়ানী ও ফেৌজদারী বিরোধ স্হানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় যে আদালত গঠিত হয় যে আদালতকে গ্রাম আদালত বলে । গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ এর আওতায় গ্রাম আদালত গঠিত হবে । কম সময়ে, অল্প খরচে, ছোট ছোট বিরোধ দ্রুত ও স্হানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করাই গ্রাম আদালতের উদ্দেশ্য ।গত ০৯ মে ২০০৬ তারিখ হতে গ্রাম আদালত আইন কার্যকর হয়েছে । ৫ (পাচ) জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয় । এরা হলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আবেদনকারীর পক্ষের ২ জন প্রতিনিধি (১ জন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং ১ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি) প্রতিবাদীর পক্ষের ২ জন প্রতিনিধি (১ জন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং ১ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি) ফৌজদারী বিষয়

১। চুরি সংক্রান্ত বিষয়াদি
২। ঋগড়া -বিবাদ
৩। শক্রতামূলক ফসল ,বাডি বা অন্য কিছুর ক্ষতি সাধন
৪। গবাদী পশু হত্যা বা ক্ষতিসাধন
৫। প্রতারণামুলক বিষয়াদি
৬। শারিরীক আক্রমণ ,ক্ষতি সাধন, বল প্রয়োগ করে ফুলা ও জখম করা ।
৭। গচিছত কোনো মুল্যবান দ্রব্য বা জমি আত্নসাৎ
 দেওয়ানী বিষয়
১। স্হাবর সম্পতি দখল পুনরুদ্ধার
২। অস্হাবর সম্পত্তি বা তার মূল্য আদায়
৩। অস্হাবর সম্পত্তি ক্ষতিসাধনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়
৪। কৃষি শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরী পরিশোধ ও ক্ষতিপুরণ আদায়ের মামলা
৫। চুক্তি বা দলিল মূল্যে প্রাপ্য টাকা আদায়